অলৌকিক
- Hashtag Kalakar
- Apr 26, 2023
- 7 min read
By Kollorob
কান ফাটা আওয়াজে চমকে ওঠা লোকলয় স্তব্ধ হয়ে গেল। গুডুম, গুড়ুম–আওয়াজটা যে ছোটদের ছবি আঁকা কমিক বইয়ের নয়, বুঝতেই মাদুস,অজয়, বিবেক আর গুর সিং এর চোখের সামনে তাদের কারখানার মালিককে লুটিয়ে পড়তে দেখল। পুলিশ কর্তা অদূরে দাঁড়িয়ে মজা লুটলেন। কলারটা আরো উঁচিয়ে এক নলাটা শিরদাঁড়ার নীচে গুঁজে, রাসভারি মেজাজ দেখিয়ে,দিল চায়ের অর্ডার–"ওই বড়ো করে একটা চা বানাতো, আগে ঐ নমকিন বিস্কুটটা দে!" কাঁপা হাতের থেকে গ্লাস ভর্তি চা ও বিস্কুটটা নিয়ে কামড় দিতেই, এলো এক প্রতিবাদী গলা, তবে ধরা গলায় নয় গলা চড়িয়ে–"বড্ড বার হয়েছে তোর রুকু! এখনও বলছি ফিরে আয়–মানুষের জীবণ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছিস তো! যেদিন ক্ষমতার হাতটা মাথা থেকে সরবে, কুকুর বেড়াল ছিঁড়ে খাবে তোকে, দেখে নিস! ফিরে আয়, খেঁটে খা, ক্ষমতার নোংরা খেলায় মাতিস না!"
মানব কাকা একদমে কথাগুলো বলে ক্ষান্ত হলো। রাকেশ চায়ে বিস্কুট ডুবিয়ে আওয়াজ করে চা চুমুক দিতে লাগল। বডিটা পেঁচু কর্তার তত্ত্বাবধানে রাকেশ এর সাকরেদরা সরিয়ে, রাস্তায় জল ঢেলে দিল। তার দু চার ফোঁটা রাকেশ ও মানবের পায়ের নীচে এসে লাগল। মানব রাগে অসহ্য জ্বালায় ফুঁসতে লাগল।
মানবকে রাকেশ বাবার মতো সম্মান করে। মনে মনে কদর করে লোকটার। তাই উত্তর দিতে পারে না কথাগুলোর। কবিরকে এই চক্রের হাতে শেষ হতে দেখেছে মানব। তাই জনদরদী প্রাণের বন্ধুর ছেলেটিকে আপ্রাণ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে স্বাভাবিক জীবনে। কিন্তু যে পাপীরা তার বাপকে কেড়ে নিল তার কাছ থেকে,সেই পাপীদের সাথে সে জুড়ে গেছে। অনেকে বারণ করলেও হাল ছাড়েনি মানব। যাকে ছোট থেকে কোলে নিয়ে বড় করেছে, কাকাই ডাকটা শুনে গালে নাকে মুখে হামি খেয়েছে, সে শুধু টাকার লোভে বিপথে তলিয়ে যাবে, মানতে পারে না মানব।
আর ফতেমা, যাকে বোনের দর্জা দিয়েছে, তার ছেলেকে কুপথে কি করে সে ঠেলে দেবে। ফতেমাকে তো রাকেশ পাত্তাই দেয় না। যে ছেলে বইয়ের পাতা জ্বালিয়ে বিড়ি ধরাতো, সে আজ মানব না থাকলে ছোট থেকেই হয়তো এই লাইনে নেমে পড়ত। কবির তো মানুষ মারা আটকাতে শেষ হয়ে গেল, কিন্তু প্রতিবাদী বাপের এরকম ছেলে হবে কি করে! মানতে না পেরে, কত মার মেরেছে মানব। রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে, চেলা কাঠ দিয়ে পিটিয়েছে। টুঁ শব্দটি করে নি, কিন্তু এপথও ছাড়ে নি। ফতেমা যে বাচ্চাকে মানুষ করতে নিজেকে নিংড়িয়েছে, সেই ছেলে যেন শুধু মা বলেই ছাড় দিয়েছে। একমাত্র মানব ছাড়া রাকেশ কাউকে সম্মান করে না। ফতেমা তো বলে,–"রেগে গিয়ে তাকে মাথায় বন্ধুক পর্যন্ত সে ঠেকিয়েছে!"
পুলিশের জিপ হর্ণ বাজিয়ে ভিড় সরিয়ে এগিয়ে গেলে, রাকেশ চোখ তুলল। তাতেই চোখে পড়ল এক ফুটফুটে বাচ্চার মুখ, আর তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা হতবাক এক মহিলার ছলছলে চোখ। রাকেশ এর দিকে ফিরে মানব আকুতি করে বলল–"হা ঈশ্বর!"
রাকেশ শেষ অবধি মেজাজ হারিয়ে চায়ের গ্লাস আঁছড়ে মাটিতে ফেলে বলল–" ধুর শালা, চুথিয়ার দল, সব কটা চুথিয়া!"
মানব নির্বাক দর্শকের মতো দেখল লাফাঙ্গার মতো রাকেশকে হেঁটে চলে যেতে। তারপর কোথা থেকে মোড়ের মাথাতে, বাইক চড়ে ঝড়ের বেগে উড়ে যেতে।
তারপর দুদিন যাবৎ রাকেশ বেপাত্তা, যা হয় গা ঢাকা দিলে। মানব খোঁজ নিয়েছিল, লাভ হয়নি!
পরের দিন, মানে তৃতীয় দিন আবার হাটপাড়া স্বাভাবিক হয়ে উঠল। যেন কিছুই হয়নি, এ রোজগেরে। মনমরা মানব নিজের দোকান খুলতে গিয়ে দেখে,আধ খোলা দোকানের ভিতরের বেঞ্চিতে শুয়ে অঘোরে ঘুমাচ্ছে রাকেশ। পাশে একটা খালি রঙীন বোতল। বুঝল মোটা টাকার ফসল পেটে গেছে মহারাজার। রাকেশকে ফতেমা বা কবির কেউই সেভাবে অভাবের জন্য কুপথে যাওয়ার শিক্ষা দেয় নি। শিক্ষিত করতে চেয়েছে, কবির মানুষের সাথে কাজ করতে শিখিয়েছে। ছোট থেকে সে উদার ও জনদরদী মানুষকেই পাশে পেয়েছে। দেখেছে নিজের পাতের ভাত থেকে অন্যের পেট ভরাতে! তবু যে সে কি করে~তাজ্জব লাগে মানবের।
চা তৈরি করে,প্রথমে একটা কাপে ঢেলে,ধাক্কা দিয়ে রাকেশকে ঘুম থেকে উঠিয়ে হাতে ধরিয়ে দিল। আধশোয়া হয়ে নির্বিকার বাঁ হাতে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বেঞ্চের তলায় রাখতেই, মানব কর্কশ স্বরে বলে উঠল–"যাও মাকে মুখটা দেখিয়ে এসো!"
বাড়িতে ঢুকতেই ফতেমার শুকনো মুখ চোখ পড়ল তার, তারপর যা হয়–কেউকেটার মাথায় পড়ল বাজ, আবার বেরিয়ে পড়ল সজোরে বাইরের দরজা বন্ধ করে। নিশব্দে ফতেমা নিজের চোখের জল ফেলল। সেটার হিসাব হয়তো কোনদিন ছেলে রাখবে বলে মনে হয় না ফতেমার, তবু আশ রাখে বুকে। রাকেশের জুতোর শব্দ পেয়ে, মানব পিছন ফিরে তার বদরাগী মুখের দিকে দেখল। বুজল মায়ের উপর ছেলের গোসা।
একদিকে নিজেদের ওস্তাদকে পেয়ে, উড়তি ছেলের ভিড় জমে গেল দোকানের সামনে। মানব বিরক্ত হয়ে খেদিয়ে দিল তাদের–"ওই দোকানের সামনে কোন মসকরা নয়, বেচা কেনার সময়, ভাগ অপদার্থের দল!"
সাথে সাথে একটি ছোকড়া চাকু বের করে মানবের মুখের চারপাশে ঘোরাতে শাসিয়ে বলল–"বেশি ফড়ফড় করো না কাকা, ডানা ছেঁটে দেব, দোকান করছো কর, বেশি মাথা চড়িও না!"
কথাটা শেষ হয়েছি কি হয়নি, এক গোঁঙানি আওয়াজে সমস্ত চায়ের জল ও গ্লাস গুলো লালে ভরে গেল। মানব কিছু বোঝার আগেই দেখল, রাকেশ তার মুখ চেপে ধরে নলি টেনে দিয়েছে,ছেলেটির হাতের চাকু দিয়ে। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে, আর ছেড়ে দেওয়া বডিটা চায়ের টেবিলে ক'বার ধাক্কা মেরে, টংটং আওয়াজ করে থেমে গেল। মুরগির জবাইয়ের মতো। মানবের পায়ে গড়ানো রক্তের স্রোত লাগতেই, তুলল চেলা কাঠ– বেধড়ক পেটাতে শুরু করল রাকেশকে, পাগলের মতো। নিস্তেজ চারিদিকে শুধু কাঠ পেটানো আওয়াজ আর মানবের উঁ উঁ শব্দ। যেন মারটা রাকেশ নয়, মানব নিজেকে মারছে। রাকেশ নির্বিকার মার খেতে খেতে জল দিয়ে চায়ের গ্লাস সাফা করে, নতুন জল চায়ের জন্য ছাপালো। জলের বালতি ঢেলে পরিষ্কার করল রক্ত দাগ। তারপর কলে জল ধরতে গেলে, মানব চেলা কাঠটা ফেলে বেঞ্চে বসে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল শিশুর মতো। রাকেশ ফিরে বালতি রেখে, পকেটের রুমালটা দিয়ে, কাকার ডান হাতে বেঁধে চোখের জল মুছিয়ে দিতেই, পিছন থেকে ডাক পেল–"ওস্তাদ তোমায় ডেরায় ডাকচ্ছে!" এর মধ্যে মানব যে কখন রাকেশের ডান হাতের সঙ্গে নিজের রুমাল বাঁধা হাতটা, বেঁধে ফেলেছে কেউ বোঝেনি। রাকেশ মুচকি হেসে আলতো ভাবে হাতটা ছাড়িয়ে,বিদায় নিল। মানব ছলছল চোখে দেখল, লাশটা রাস্তা দিয়ে ছেঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে দানবটা আর মোড় ঘুরতেই বুকটা কেমন ধড়াস করে উঠল মানবের, ভাইপোর জন্য।
বিকেল অবধি মহারাজা উধাও থাকল। সন্ধ্যা বেলায় ওর আসার সময় হলে মানব অস্থির হয়ে উঠল। দেখা পেল দোকানের টিনের দরজা নামাতে গিয়ে। তার হাত থেকে পাল্লাটা নিয়ে রাকেশ শিকল তুলল। তারপর তালা দিয়ে চাবিটা কাকার হাতে দিয়ে, কাঁধে একটা চাপ দিয়ে মুচকি হেসে চলে গেল। মানব পেছন ডাকার চেষ্টা করলেও পারল না। হাবভাব কেমন অন্য ঠেকল ভাইপোর!
মনমরা হয়ে বাড়ি ফিরছিল মানব, তার বাড়িটা হাটখোলার চৌরাস্তার দিকে, একাই হাঁটচ্ছিল~বাড়িতে একা, মানে পরমা গত হয়েছে দুবছর হলো। ছেলেপুলে নয়নি, রুকুকে তারা ছেলের মতো ভালবাসত। এখন মানব বাসে, কবিরের চলে যাওয়ার পর তো বটেই। মনটা বেশ তার আজ ভারাক্রান্ত। কিন্তু কোন শক্তি দিয়ে, সে রাকেশকে আঁটকাতে পারছে না। এইসব পায়ে পায়ে ভাবছে, ওমনি চোখে পড়ল গাড়ির আলো। হাত দিয়ে চোখ ঢাকতেই, তল চোখ দিয়ে দেখল তার দিকে হনহনিয়ে কে এগিয়ে আসছে। গলা শুনে বুঝল পেঁচু সাহেব, পুলিশ জিপটা এবার লক্ষ্য করল সে।
–"ওই রাকেশ কৈ!"
মানব কোন ভনিতা না করে বলল–"কেন! ওর খবর তো আমাদের থেকে তুমি বেশি রাখো!"
–"যা বলছি উত্তর দে!"
ততধিক চিৎকার করে মানব বলে–"কেন কি হয়েছে!"
–"কিছুই জানিস না মনে হচ্ছে; আবার রাকেশের মু'বলি বাপ!"
–"মুখ সামলে কর্তা, মান রেখে কথা বল!"
–বলতেই পেঁচু মানবের গলা ধরে ঝাঁকিয়ে চুলের মুঠি পিছনে টেনে ধরল।
–"বলব! তার আগে আমায় কি হয়েছে বলতে হবে!"
মানবের চোখ গাড়ির আলোয় জ্বলজ্বল করে উঠল। অতর্কিতে পেঁচু ছেড়ে দিয়ে বলল–"তোর রাকেশ, ডেরায় আগুণ জ্বালিয়ে সবকটাকে পুড়িয়ে মেরেছে!"
মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল মানব। বাঁহাত তুলে রাকেশেকে শেষ দেখা, রাস্তাটার দিক দেখাল। সাথে সাথে পেঁচু দারোগা তল্লাশি করতে ছুটল।
মানব মুখ চেপে হতবাক হয়ে থাকল। চোখে জলের ধারা ভোর রাতে শুকিয়ে গেছে। সারা রাত কাটল মাঝ রাস্তায় বসে।
সকালের আলো ফুটতেই দোকানের দিকে পা বাড়ল। কলে মুখ চোখ ধুঁয়ে দোকানের সামনে যেতেই দেখল দোকানের দরজায় রাকেশের জুতো ঝোলানো। আর দরজার তালা খোলা। চারিদিকে পুলিশ ওঁত পেতে আছে। বুকে বল রেখে চাড়ালো দরজা। দেখল রাকেশ বেঞ্চে বসে আছে দুহাত ভর দিয়ে। শান্তি ও ভয় একসাথে আঁকড়ে ধরল মানবকে।
রাকেশকে এক হাবিলদার দেখে বাজাল বাঁশি। পেঁচু দারোগা এসেই রাকেশের পিছনের কলার ধরে টানল। মাথা নীচু করে বসে থাকা রাকেশ মূহুর্তে ঝটকা দিয়ে পিছন থেকে টেনে পিস্তলের নলি রাখল পেঁচুর মুখের ভিতর। কড়কে বলে উঠল–"বেশি সিয়ানাগিরি করিস না কুত্তা, সব দানা ঢেলে দেব ভিতরে। আর ঐ দুই লেজুর সমেত এমন জায়গায় গাড়ব যে কাকেও টের টি পাবে না!"
পেঁচু সজোরে মারল ঘুষি রাকেশের থুতনিতে। তাতে দারোগার ঠোঁট ফাটিয়ে, বন্ধুক হাত ছাড়া হলো রাকেশের। রাকেশ প্রত্যুত্তরে পেঁচুর পায়ে সজোরে লাথি মেরে ধরাশায়ী করল। তাতে যা হলো–পেঁচুর অতর্কিতে বের করা সার্ভিস পিস্তলের গুলি লক্ষ্য ভ্রষ্ট হলো। আর কানফাটা আওয়াজের সাথে চায়ের টেবিলের সমস্ত গ্লাস উল্টে রাকেশ কোলে পেল, তার গুলি বিদ্ধ মাকে। ফতেমা রক্তমাখা হাত রাকেশের মুখে বুলিয়ে শেষবারের মতো বলল–"সুধর যা বেটা, বাপাস আ!"
মুখে রুমাল চেপে দারোগা, পুলিশের জিপ নিয়ে পালাতেই, সমস্ত এলাকা নিস্তব্ধ হয়ে গেল।
মায়ের বুকের ক্ষত থেকে বেরোনো চাপ রক্তের দিকে রাকেশ চুপ করে বসে ছিল। মানব নিজেকে সামলে রাকেশের মাথায় হাত দিতেই, রাকেশ তার পা ধরে শিশুর মতো কাঁদতে লাগল। যে চোখ রাগে হতো লাল, তা আজ দুঃখ, যাতনা আর আপেক্ষের ফল্গুধারায় লাল হয়ে উঠল। এত ভালবাসত রাকেশ ফতেমাকে! নাঃ,এ শুধুই কল্পনা!
ধীরে ধীরে জটলা সরিয়ে ফতেমাকে কোলে তুলে রাকেশ এগিয়ে চলল। মানব তার কাঁধে হাত রেখে পায়ে পা মেলালো।
শেষ কাজ করতে প্রায় সন্ধ্যে নেমে এলো। দুই মুখ অন্ধকারে শ্রান্ত পরিশ্রান্ত। কেউ কি কিছু হারালো,কেউ কি পেল,নাঃ–এ শুধু টানাপোড়েন!
স্নান সেরে দোকানে ফিরে মানব রাকেশকে জোর করে চা বিস্কুট খাইয়ে, অন্যদের দিতে যাবে–এমন সময় দেখল রাকেশ চায়ের কাপ আঁছড়ে ফেলে, মুখের সিগারেটটা ঝটকা মেরে ছুঁড়ে, এক গাড়ির পেছনে দৌড়াতে লাগল।
হাটখোলার চৌরাস্তার মোড় থেকে আলোয় মিলিয়ে গেল হাইরোড়ের দিকে।
খুব ভোর বেলা ফিরল সে। মানব দোকানে সারা রাত তার অপেক্ষাই ছিল। তাকে দেখেই সকালর চা বসিয়েছে, এমনসময় পুলিশের জিপ এসে ঢুকল দুটো। মুখ চাপা পেঁচুর সাথে পুলিশ কমিশনার। এসেই রাকেশকে চিহ্নিত করল পেঁচু। কমিশনার এগিয়ে এসে এলাকার মানুষের সাক্ষী চাইলে, হাটখোলা গুম হয়ে রাকেশকে ঘিরে দাঁড়াল। কেউ রাকেশকে চিনল না, বরং ফতেমার আসামিকে কমিশনারের সামনে চিহ্নিত করল।
যেন ফতেমার মৃত্যু শোকের বদলা চলছে। প্রমাণ খতিয়ে দেখতে ফতেমার ঘর,রাকেশর গোপন জায়গাগুলো আর রাকেশের খানা তল্লাশি চলল সর্বসমক্ষে। সবাই নির্বাক দর্শক। দারোগা তার তোলা অভিযোগের, কিছু প্রমাণ জোগাড় করতে পারল না। অবশেষে বিনা প্রমাণে চোখের ইশারা করে, কমিশনার গাড়ি উঠল। যাওয়ার সময়, রাকেশকে শহর ছাড়তে বারণ করে গেল। রাকেশ মাথা নীচু করে দুহাতে ভর দিয়ে বেঞ্চে বসে রইল। মানব কমিনশার সাহেবের সামনে গিয়ে পেঁচু দারোগাকে মুখ খিঁচিয়ে বলে–"যে অভিযোগ তুলছো সাহেব, তা তো তুমিও করাতে পারো!... " কথা শেষ না হতেই এক অহংকারী লাল মুখ,রুমালে ঠোঁট চাপা দিয়ে, জিপের কালো ধোঁয়ায় আওয়াজ করে মিলিয়ে গেল।
ভিড় কাটলে, মানব তার পাশে গিয়ে বসে বলল–"তোর বন্ধুক, চাকু, ছোরা, কাঁচা টাকার বাণ্ডিল কোথায় গেল!"
রাকেশ হাটখোলার সবাইকে ডাকতে বলে,বলতে শুরু করল। তা যা দাঁড়ালো এই–
সেদিন সুপারি পেয়ে যে কারখানার মালিককে সে মেরেছিল, কাল সন্ধ্যা বেলা তার স্ত্রী ও বাচ্চাকে, গাড়ি করে যেতে দেখে পিছু নেয় সে। ট্রাফিকে দাঁড়ানো অবস্থায় সে মহিলাকে নামার অনুরোধ করে, ড্রাইভারকে হাত জোড় করে। প্রথম দিকে মহিলা রাকেশকে চিনতে পেরে আঁৎকে উঠে বাচ্চাকে জড়িয়ে ধরে। অনুরোধে গাড়ি রাস্তার পাশে এলে রাকেশ মহিলার পা ছুঁয়ে ক্ষমা চায়। বাচ্চাকে একটা মাথায় চুমু খেয়ে কেঁদে ফেলে। বাচ্চাটি তার চোখের জল মুছিয়ে দিলে, সে মহিলার হাতে নিজের বন্ধুক দিয়ে তাকে পিছন থেকে গুলি করে প্রতিশোধ নিতে বলেছিল। কারণ বশত সে, মহিলাটির হাতের তালু চাকু দিয়ে ছিঁড়তে যায়। মহিলা বাধা দিয়ে বলে, প্রায়শ্চিত্ত করতে। তখন সে মহিলাকে পকেট থেকে টাকার বাণ্ডিলটা বের করে দিতে যায়, তান তিনি রাকেশকে সব টাকা অনাথ আশ্রমে দান করার কথা বলেন। আরও বলেন, সে যেন অস্ত্রগুলো জীবনের থেকে বাদ দেয়। আর তার প্রাপ্য শাস্তি নিজেকে নিজে দিতে।
পিছন ফিরে অন্ধকারে আলোর চিলতে পায় রাকেশ, বাচ্চার মিষ্টি হাসি, মহিলার জ্বালাময়ী ক্ষমার চোখ, গিলে খায় তাকে।
হঠাৎ রাকেশ মানবের পা জড়িয়ে বসে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে বলে–"আমি,না বুঝে সব করেছি। ঐ বাচ্চাটার কি দোষ ছিল কাকা! আর আমার আম্মির! এ অনাথের আর কি আর কতল করা সাজে!"
আগ্নেয়গিরিকে বৃষ্টি ধারায় নিভতে দেখে, মানব তার কাকাইকে বুকে টেনে নিল। তারপর ফতেমা ও কবিরকে উদ্দেশ্য করে আকাশ পানে চেয়ে বলেছিল–"সত্যি দেখালি আমায়,অলৌকিক!"
By Kollorob

Comments