আঁচল
top of page

আঁচল

By Ankita Sen


অমলা জীবনের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরল। চেপে ধরা বললে ভুল হবে সর্বশক্তি দিয়ে আঁকড়ে ধরল। সহায় সম্বলহীন মানুষ যেমন তার শেষ আশ্রয়স্থলটিকে আঁকড়ে ধরে। চির পরিচিত গন্ডি , মা বাবার স্নেহের আশ্রয় ছেড়ে সে পা বাড়িয়েছে এক অজানা পথের উদ্দেশ্যে। কিন্তু ভালোবাসার মানুষটা শক্ত করে হাত ধরে থাকলে কোনো অজানাই ভয়ের হয়না।


তিন মাসের প্রেম অমলা আর জীবনের । এত কম সময়ের মধ্যে যে দুজন দুজনকে এতটা ভালোবাসতে পারে তা অমলার জানা ছিল না। বাড়ির লোককে না জানিয়েই তারা পালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জীবন যে কেন এত তাড়াহুড়ো করল তা বুঝে উঠতে পারেনা সে । এমনকি তার বাড়িতে জানানোরও সুযোগ দিলনা। জীবন বলত বাড়িতে জানলে যদি তাদের মেনে না নেয় তখন? এক মুহূর্তও সে অমলাকে ছেড়ে থাকতে পারবেনা। তাই পালিয়ে বিয়ে করে এসে একেবারে বাড়িতে জানালে তখন কেউ না করতে পারবেনা। তাই তার এই সিদ্ধান্ত মুখ বুজে মেনে নিলেও চলে আসার সময় বাবা মায়ের অশ্রুসজল মুখটার কথা মনে করে একমাত্র আদরের মেয়ে অমলার গাল বেয়ে মুক্তো ধারার মতো জলের ফোঁটা ঝরে পড়ল । কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই সচেতন হয়ে মুছে ফেলল মনখারাপের চিহ্ন। কারন জীবন বার বার বারন করে দিয়েছে কান্নাকাটি করতে। তাতে লোক সন্দেহ করতে পারে। একটা কথা অমলা বুঝতে পারেনা এত কিসের লুকোচুরি ; তারা তো প্রাপ্তবয়স্ক , তাই আশে পাশের লোক কী ভাবল তাতে কী এসে যায় ?


এক দিকে মন খারাপ অন্য দিকে ভালো লাগা ভালোবাসা । ভালোথাকা কে সাক্ষী করে সন্ধ্যার নাগাদ কলকাতা থেকে সুদূর মুম্বাই-এ পৌঁছে গেছে , এখন তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু কেন ? বিয়ে তো কলকাতার কোথাও করলেই হতো তার জন্য এত দূরে কেন আসা ? এই প্রশ্ন তার মনে বার বার ধাক্কা দিতে থাকে। জীবনকে জিজ্ঞাসা করে তার সুদুত্তর পাইনি। সে বলেছে মুম্বই-এ তার অনেক চেনা জানা আছে তাই কিছু দিন গা ঢাকা দিয়ে তাদের মধুচন্দ্রিমাটা সুন্দর ভাবে কাটিয়েই ফিরবে। লজ্জায় রাঙা হয়ে ওঠে অমলা ।


জীবনের ধাক্কায় সম্বিৎ ফিরে পায় অমলা। ট্যাক্সি থেকে নেমে ভাড়া মেটাচ্ছে তার ভালোবাসার মানুষটা। তার পর সামনের একটা বাড়ি দেখিয়েই জীবন বলল এটাই নাকি তাদের নতুন ঠিকানা। এক অন্যরকম ভয় আনন্দ উত্তেজন্য মেশানো এক অনুভূতি অমলাকে perfume-এর মতো জড়িয়ে রেখেছে।





জীবন অমলাকে তাড়াতাড়ি স্নান সেরে সুন্দর করে সেজে নিতে বলল, কারন অমলাকে দেখতে নাকি তার দুরসম্পর্কে কাকু আর কয়েকজন বন্ধু আসবে। এবার পুজোয় বাবার পছন্দ করে কিনে দেওয়া লাল ঢাকাইটা পড়ল । আর সাথে করে নিয়ে আসা একছড়া মালা , দুগাছি চুড়ি আর একটা ঝুমকো পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। নিজেকে আজ যেন এক পরিপূর্ণ নারী মনে হচ্ছে। হঠাৎ পিছন ফিরে দেখল জীবন তাকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখল। সে লজ্জায় দৃষ্টি নামিয়ে নিল। জীবন তাকে এক গভীর আলিঙ্গন করল। কিন্তু কেন জানিনা অমলার মনে হচ্ছে সেই আলিঙ্গনে কাছে পাওয়ার ভালোবাসা নেই। মানুষ ছেড়ে চলে যাবার আগে যেমন আঁকড়ে জড়িয়ে ধরে এটা তেমন-ই, কিন্তু ?? ঠক্ ঠক্ ঠক!! অমলার চিন্তাই বাধা পড়ল । দরজায় কেউ ডাকছে। জীবন গিয়ে দরজা খুলে দিল । চার পাঁচ জন লোক ঢুকেই অমলাকে পর্যবেক্ষন করতে লাগল আপাদমস্তক । এক অজানা অস্বস্তিতে গায়ের আঁচল টেনে নিয়ে অন্য একটা ঘরে চলে এল । তার দুরসম্পর্কীয় কাকা শ্বশুরকে প্রণাম করার কথা মাথাতে এল না। কিছু সময় কেটে গেছে তবু সে বের হয়নি। তার পর তার মনে হল এবার বাইরে যেতেই যাওয়া উচিত নাতো তারা কী ভাববে, আর জীবনের সম্মান ই বা কোথায় থাকে। এই ভেবে বাইরে বেরোতেই সে থমকে দাঁড়ালো। সিঁড়ির নিচে জীবন আর তার দুই বন্ধু কথা বলছে। কথা গুলো কানে যেতেই অমলার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল চোখের সামনে অন্ধকার হয়ে গেল। অমলা শুনতে পেল জীবনের বন্ধু বলছে-

"কী রে এই একটাকে তুলতে এত সময় লাগল? এই রকম তো কখনও তোর হয় না? সত্যি প্রেমে পড়লি নাকি? দেখ ভাই তুই আগেই অ্যাডভান্স নিয়ে নিয়েছিস এখন টার্গেট পূরণ করতে না পারলে বস ছাড়বে না।"

এরপর জীবন বলল -

"ধ্যাত কী যে বলিস বাইরে কাষ্টমার বসে আছে , আজকে এই একাট্রা ইনকামটা করে নিই। বসের হাতে দিয়ে দিলে তো আর হবেনা। আর প্রেম ফুঃ .......!!

ভাই এটাই আমার কাজ মেয়ে তুলে এনে বিক্রি করা

। সেই রকম হতে গেলে তো আমাকে রোজ প্রেমে পড়তে হবে। ছাড় ওসব কথা সময় বুঝে আমাকে পালিয়ে যেতে হবে অমলাকে এখন জানতে দেওয়া চলবেনা তাতে যদি বেশি ট্যাঁ ফোঁ করে " ।

মুখে একথা বললেও তার বুকের বাঁ দিকটা কীসের এক ব্যাথায় চিন চিন করে বসল। তাহলে কীসে সত্যিই অমলাকে ??? না না এসব চিন্তা মনে আনা ও ঠিক না। জীবনের এসব চিন্তা অ্যাডভান্সের টাকার হাওয়া এক লহমায় উড়িয়ে দিল।


অমলার সামনে গোটা পৃথিবী ঘুরতে থাকল , যে ভালোবাসাকে আঁকড়ে ধরে নিশ্চিন্ত আশ্রয় , বাবা মার স্নেহ আব্দার ভালোবাসার গন্ডী হেলায় ছেড়ে বেরিয়ে এল । সেই হাত আজকে তাকে সুনিপূণভাবে পতিতা পল্লীর দরজায় এনে দাঁড় করালো। এখন কী করার আছে তার ? এই অজানা অচেনা জায়গা থেকে আর কখনও পালানোও সম্ভব নয় এই নরপশুদের হাত এড়িয়ে। এক রাশ অভিমান, রাগ, বিশ্বাসভাঙার বেদনা সবকিছু অমলাকে এবং তার চিন্তা শক্তিকে পঙ্গু করে দিল।


"অ্যাই শুনছ ! আমাকে একবার বাইরে যেতে হবে খাবার কিনতে তুমি থাকো , সবাই আছে তো ভয় নেই "। অমলা পাথরের মতো হয়ে বলল-

" তোমাকে আর অজুহাত খুঁজে যেতে হবেনা। আমিই নিজেই যাচ্ছি " ।


এই বলে অমলা জীবনের দুরসম্পর্কীয় কাকুদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ধীরে ধীরে অমলার শাড়ির আঁচল সরে গেল।



By Ankita Sen




419 views68 comments

Recent Posts

See All

He Said, He Said

By Vishnu J Inspector Raghav Soliah paced briskly around the room, the subtle aroma of his Marlboro trailing behind him. The police station was buzzing with activity, with his colleagues running aroun

Jurm Aur Jurmana

By Chirag उस्मान-लंगड़े ने बिल्डिंग के बेसमेंट में गाडी पार्क की ही थी कि अचानक किसी के कराहने ने की एक आवाज़ आईI आवाज़ सुनते ही उस्मान-लंगड़े का गुनगुनाना ऐसे बंध हो गया मानो किसी ने रिमोट-कंट्रोल पर म्य

bottom of page