Vritrakshi
- Hashtag Kalakar
- Jun 7, 2024
- 6 min read
By Sanchita Kar
রৌনকপুর গ্রামে রিসার্চের আইডিয়াটা ছিল সায়নির। তখন আইডিয়াটা খুব ভালো লাগলেও এখন আর সেটা কারোরই মনে হচ্ছে না। ঘটনাটা কি সেটা বুঝতে হলে আরও কয়েক দিন পিছন থেকে গল্পটা বলা শুরু করা দরকার।
মঙ্গলবার কলেজ থেকে ফিরে তুষার ব্যাগটা বিছানার এক পাশে রেখে পড়ার টেবিল চেয়ারে গিয়ে বসল। এই সেমেস্টারটা পাস করতে হলে ওদেরকে একটা প্রজেক্ট সাবমিট করতে হবে। ইতিহাসের ছাত্র সে। তার ওপর নানাবিধ রূপকথা নিয়েই মূলত তার কারবার। কি প্রজেক্ট করবে সেটাই ভাবছে এমন সময় তিয়াসার কল। ওরা একই ক্লাসে পড়ে। ফোনটা রিসিভ হতেই ওপাশ থেকে গলা ভেসে এলো, “শোন, সায়নি আর আমি একটা ভালো গ্রামের খোঁজ পেয়েছি – রৌনকপুর। ওখানে একটা মন্দির নিয়ে নাকি কিছু গল্প প্রচলিত আছে। ভাবছি আমাদের রিসার্চের টপিক যদি ওটাই করা যেত”। প্রজেক্টের দলে ছ’জন – তিয়াসা, সায়নি, রিশা, অনিক, দীপ আর তুষার। খানিকক্ষণ ভেবে তুষার রাজি হয়ে গেল।
মা বাবাকে সেই মত জানিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে ওরা রওনা দিল রৌনকপুর। ওখানে পৌছতে প্রায় বিকেল পাঁচটা বেজে গেছিল। অনিক আগে থেকেই খোঁজখবর করে একজন বৃদ্ধার বাড়িতে থাকার ব্যাবস্থা করে রেখেছিল। ওরা যেতেই উনি বেরিয়ে এসে ওদের স্বাদরে ঘরে নিয়ে গেলেন। বৃদ্ধা অন্ধ, চোখের চামড়াটা সেলাই করা। উনি ওদের বসিয়ে ভিতরে গেলেন চা জলখাবারের ব্যাবস্থা করতে। ফিরে এসে উনি বসলেন গল্প করতে। অন্ধ হলেও একটা লাঠির ভরসায় ভালই চলাফেরা করতে পারেন।
বৃদ্ধা বলতে শুরু করলেন, “আজ থেকে প্রায় পয়ষট্টি বছর আগের ঘটনা এটা। আমার তখন সবে সতেরো বছর বয়স। আমি তখন চোখে দেখতে পেতাম। গ্রামে এক কাঠুরে কাঠ কেটে ফেরার পথে দেখে এক অপরুপা নারী মূর্তি। কালো পাথর দিয়ে তৈরি। মূর্তির মুখটা পাস ফেরানো আর এক হাতে একটা লাল শঙ্খ তুলে বাজাচ্ছেন। অন্য হাতে জড়িয়ে রয়েছে একটা খয়েরি সাপ। খাটো ধুতির আকারে একটা কাপড় জড়ানো কোমর থেকে হাঁটু অব্দি। বস্ত্র-বিহীন বুকে রয়েছে একটা কারু কার্য করা বিশাল হার। মাথার ঢেউ খেলানো চুল খোলা, কোমর অব্দি। কানে বড় বড় কানবালি। সবটাই চকচকে কালো পাথরে গড়া। সে মূর্তি ওই কাঠুরে আগে কখনো দেখেনি। গ্রামে ফিরে সে কথা জানাতে, প্রায় সকলেই সেই মূর্তি দেখতে গেছিল। আমিও দেখেছিলাম। কি সুন্দর। কিন্তু আমাদের চেনা-পরিচিত কোনো দেব-দেবীর সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। ছোট গ্রামে এ হেন মূর্তি, স্বাভাবিক ভাবেই সবার কৌতূহল বাড়িয়ে দিয়েছিল কিন্তু কেউই বিশেষ কিছু ঠাওর করতে না পেরে যে যার রোজকার জীবনে ফিরে গেলো। একদিন হঠাৎই সেই কাঠুরে জঙ্গল থেকে ফিরছে না দেখে কাঠুরে-বউ গ্রামের কিছু ছেলে-পিলেদের নিয়ে তার খোঁজ করতে গেলেন। তাকে খুঁজে পাওয়া যায় সেই মূর্তির সামনে রক্তশূন্য অবস্থায়। দিনটা ছিল অমাবস্যা। ওই ঘটনার পর প্রায় প্রতি মাসেই অমাবস্যায় কেউ না কেউ মারা যেতে থাকে। সবাইকেই পাওয়া যায় একইরকম রক্তশূন্য অবস্থায়। তখন রক্ত পিশাচিনির ওপর সকলেই ক্ষেপে উঠে মূর্তিটা ভাঙতে যেতেই ঘটে আর এক বিপদ। যেই লোকটা আঘাত হানতে এগিয়ে গেছিল, সে পা পিছলে পড়ে সামনের একটা পাথরের ওপর। মাথা থেতলে যায়। এই দেখে সবাই ভয়ে ওখান থেকে পালিয়ে আসে। এখানে বলি, আমার ঠাকুরদা হচ্ছেন একজন তান্ত্রিক। প্রচুর সাধনাও করেছেন। উনিই শেষে প্রচুর চিন্তা ভাবনা করে এক বিশাল যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। সেই যজ্ঞে আমিও ছিলাম কিন্তু আমার একটা ভুলে অনেক বড়ো ক্ষতি হয়ে গেছিল”।
“কি ক্ষতি?”, জিজ্ঞেস করল দীপ। গল্প শোনার আগ্রহে ওরা সবাই সামনে ঝুঁকে পড়েছে। এমন বিচিত্র গল্পের সন্ধান মিলবে এটা কেউই আশা করেনি। চাও ততক্ষণে এসে গেছে। বৃদ্ধা একটু জল খেয়ে আবার বলতে শুরু করলেন, “ঠাকুরদার কড়া আদেশ ছিল যজ্ঞ চলাকালীন জেগে থাকতে হবে। কিন্তু আমি তখন ছেলেমানুষ। কতই বা আর বোধবুদ্ধি ছিল। আমি যজ্ঞের মাঝেই কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানিনা। পরদিন সকালে আর চোখ খোলা সম্ভব হয়নি। ওই রক্ত পিশাচির অভিশাপে আমার চোখ দুটো চিরকালের মতো চলে গেছিল”। অল্প কাঁপা গলায় বললেন শেষের কথাগুলো। শুনে ওদের সবারই মনটা ভারী হয়ে গেল। বৃদ্ধাকে খুব ভালো লেগেছে ওদের। বেশ একটা আপন আপন ব্যাপার আছে। রিশা হঠাৎ প্রশ্ন করে, “আচ্ছা ঠাম্মি, তুমি যে বললে তোমার ঠাকুরদা ‘হচ্ছেন’ একজন তান্ত্রিক, তা উনি কি এখনও জীবিত?” বৃদ্ধা হেসে বললেন, “বাবা! ও মেয়ে, তুমি তো খুব বুদ্ধিমতি। ওইটুকু কথাটাও লক্ষ্য করেছো ঠিক। হাহাহা, হ্যা, উনি এখনও বেঁচে আছেন”। সায়নি অবাক হয়ে মুখ খোলে, “বলো কি গো ঠাম্মি? তুমিই তো ঠাম্মি, তোমার আবার ঠাকুরদা… আর সে এখনও বেঁচে আছে?” ওর কথা শুনে বৃদ্ধা হোহো করে হেসে উঠলেন। বললেন, “তোমরা বস এখানে। আমি বরং ঠাকুরদাকে নিয়ে আসি। বাড়িতে তো আমরা দুটি মাত্র প্রাণী। সিমি সকাল-বিকেল এসে বাড়ির কাজ কর্মে সাহায্য করে দেয়”।
একটু পরে একজন ভদ্রলোককে নিয়ে একটা মাঝবয়সি মহিলা ঘরে ঢুকলো। বৃদ্ধকে দেখলে বোঝা যায় না ওনার আসল বয়স কত। হয়ত তন্ত্র সাধনার ফল। উনি একটা চেয়ারে বসে গমগমে গলায় বললেন, “রুমি তোমাদের ভৃত্রাক্ষির কথা বলছিল বুঝি? ওই পিশাচিনিকে কি ভাবে ঠেকিয়েছিলাম জানো?” ৬ জনই নেতিবাচক মাথা নাড়লো। বৃদ্ধ বলতে শুরু করলেন, “প্রচুর পুঁথি ঘেঁটে অন্ধকারের অনেক নিচ থেকে উঠে আসা এই পিশাচিনির বিতারনি মন্ত্র খুঁজে পাই, খুব কঠিন সেই যজ্ঞ। উপকরণ জোগাড় করতে আমার দুইমাস লেগেছিল। ভৃত্রাক্ষিকে পুরোপুরি তাড়াতে পারিনি। ভৃত্র দানবের সঙ্গী এ। রিগবেদ মতে ভৃত্র হল ইন্দ্রের শত্রু, জল শুষে নিয়ে খরা নিয়ে আসে। আর এই লোভ আর কামের দানবী রক্ত শুষে নিজের তৃষ্ণা মেটায়। ওকে কোনমতে বন্দী করতে পেরেছিলাম মন্ত্রের জালে। সেই জাল একটা মন্দিরের আকার ধারন করে আজও আমাদের রক্ষা করে চলেছে”। বৃদ্ধা দুহাত জড়ো করে কপালে ঠেকালেন। “তোমরা পড়াশোনার কাজে এসেছো, কিন্তু খুব সাবধান, মন্দিরের কাছে যেও না। দূর থেকেই দেখো, কেমন?” ওরা সবাই মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল।
পরদিন দুপুরে খেয়ে উঠে ওরা বৃদ্ধার বলা রাস্তা ধরে পৌঁছে গেল জঙ্গলের গভীরে, মন্দির চত্বরে। ঘন গাছপালার ভিতর ভগ্নপ্রায় মন্দিরটাকে দেখলে মনে হয় পোড়া-মাটির তৈরী, একটা অপার্থিব লাল আভা বেরোচ্ছে। কাছে যেতেই বুঝতে পারলো দেওয়ালের গায়ে অসংখ্য সংস্কৃত মন্ত্র খোদাই করা। ঘুরতে ঘুরতে পেছনের দিকে আসতেই তিয়াসা আর সায়নি একটা অদ্ভুত গুনগুন করে আওয়াজ পেল। আওয়াজের উৎস খুঁজতে খুঁজতে ওরা সামনের একটা আধখোলা কারুকার্য করা দরজার কাছে পৌঁছলো। পিছন পিছন বাকিরাও এসে উপস্থিত হয়েছে। ভেতরের দৃশ্য দেখে সবাই হকচকিয়ে গেছে। একটা লম্বাটে ঘর, তার দুপাশের দেওয়ালে বারোটি ছোট ছোট খোপে দেব-দেবীর মূর্তি। আমরা সাধারনত যে বারোটি রাশি দেখে থাকি, তারই অতিমানবিক রূপ। যেমন অর্ধ-মৎস অর্ধ-মানব মীন রাশির দেবী, ধনুক ধারি অর্ধ-অশ্ব অর্ধ-মানব ধনু রাশির দেবতা, তুলা দন্ড হাতে দাড়িয়ে তুলা রাশির দেবী ইত্যাদি। এক-এক দেওয়ালে ছটি মূর্তি। একদম শেষে দরজার উল্টো দিকের দেওয়ালে এক অতিপ্রাকৃতিক নারী মূর্তির সামনে বিশাল যজ্ঞের বেদি বানানো। তাতে আগুন জ্বলছে আর সেই আগুনে একজন ক্রমাগত ঘী ঢেলে চলেছে, সাথে দুর্বোধ্য ভাষায় কি সব মন্ত্র। লোকটা ওদের দিকে পিছন ফিরে, ভৃত্রাক্ষির উদ্দেশ্য আরাধনা করছে। দীপ সন্তর্পনে নিজের ফোনটা বের করে ভিডিও বাটনটা অন করে দিল। লোকটা শেষে একটা ছুরি বের করে নিজের হাতটা কাটতে যাবে এমন সময় তুষার সামলাতে না পেরে একটা হাঁচি দিয়ে ফেললো। লোকটা চকিতে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে ওদের দিকে চাইলো। ওরা ভয়ে পালানোর চেষ্টা করল কিন্তু যেন কোন এক অদৃশ্য বন্ধনে ওরা আষ্টেপৃষ্ঠে আটকা পড়েছে। হেল্প হেল্প বলে চিৎকার করেও কোনো লাভ হলো না। ভর দুপুরে অভিশপ্ত এলাকায় লোকজন থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক। ওদেরকে এক টানে মন্দিরের ভেতরে এনে দরজাটা সজোরে বন্ধ করে দিল। লোকটা সেই বৃদ্ধার ঠাকুরদা।
রাগে তখন ওনার চোখ ভাটার মত জ্বলছে। ওরা ভয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো। চিৎকার করে উনি বললেন, “আমার এত দিনের সাধনাকে ব্যর্থ করার সাহস হয় কিভাবে তোদের? মন্দিরের কাছে আসতে বারণ করেছিলাম তো। এই পিশাচিনিকে ধরতে আমার বারো বছর লেগেছিল। এর তৃষ্ণা মেটাতে কত গ্রামবাসীকে বলি দিয়েছি জানিস? লোকজন বুঝে ফেলার আগেই ওদের উদ্ধার করার ছলনায় মহাডামোর তন্ত্র উপায়ে ভৃত্রাক্ষিকে বন্দি বানাই এই মন্ত্রপূত মন্দিরে যাতে নির্বিঘ্নে ওর উপাসনা করতে পারি। নিজের নাতনির চোখও বলি দিয়েছি সেটার জন্য, আর তোরা সেটা নষ্ট করতে এসেছিস?”। যতটা সম্ভব সাহস সঞ্চার করে কাঁদো কাঁদো গলায় রিশা বলে, “শয়তানের উপাসক হয়ে বেশিদিন বাঁচে না কেউ। তুমিও ছাড় পাবে না”। নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে মানুষের বুঝি সাহস সত্যিই বেড়ে যায়।
“আমি ছাড় পাবো না? মূর্খ, আমার ক্ষমতার কোনো ধারণা আছে তোদের?”, বলে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন বৃদ্ধ। অবশ্য তাকে বৃদ্ধ বলা চলে না আর। নিজের জায়গা থেকে একটুও না নড়েই উনি যে ভাবে ওদের আটক করেছেন তাতে ওনার ক্ষমতার পরিচয় ভালই পাওয়া যায়। “আমার বয়স ১৪৫ বছর। আমি অমর। এই যজ্ঞটা শেষ হলে আমি চির যৌবন লাভ করবো। কেউ আমাকে আটকাতে পারেনি আর পারবেও না। কিন্তু তার আগে তোদের শেষ করা দরকার”। এই বলে একটা মন্ত্র উচ্চারণ করে হাতের ভঙ্গিতে রিশাকে দল থেকে আলাদা করে দিলেন। “খুব মাতব্বর তুই। দলের পান্ডা হয়েছিস না? দাড়া তোকেই আগে পুড়িয়ে মারবো”, এই বলে উনি এক প্রকার হির হির করে টেনে নিয়ে গিয়ে রিশাকে আগুনের বেদিতে ঠেলে দিলেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই খুব তাড়াতাড়ি ঘটে গেল সবকিছু। বাকিরা যারা এতক্ষন অদৃশ্য বাঁধনে থেকে ছটফট করছিল, তারাও কিংক্তব্যবিমূঢ় হয়ে আগুনের দিকে তাকিয়ে রইল। অজান্তেই চোখ থেকে জল গড়াচ্ছে সবার।
এরপরই অকস্মাৎ সেই আগুনের একটা বড়ো লেলিহান শিখা বেড়িয়ে এলো বেদি থেকে আর এক লহমায় লোকটাকে ভিতরে টেনে নিল। সেই সঙ্গে রিশাও ছিটকে বেরিয়ে এলো। গায়ে অল্প পোড়া দাগ। জায়গায় জায়গায় কালো ছাইয়ের ছোপ। অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে আছে সে। লোকটার অন্তর্ধানের সাথেই বাঁধনও আলগা হয়ে গেছে। বাকিরা এক ছুটে রিশার কাছে গেল। জ্ঞ্যান ফেরানোর চেষ্টায় ওরা জলের বোতল থেকে জল ছেটাতে লাগলো। আসতে আসতে রিশার জ্ঞ্যান ফিরলো। ইতিম্যেই মন্দির প্রাঙ্গণে নতুন বিপদের উৎপত্তি। আগুনের শিখা ক্রমে বাড়তে শুরু করেছে। সমস্ত রাশি মূর্তির চোখ থেকে ঠিকরে বেরোতে লাগলো লাল আলো। মুর্তিগুলো সমশ্বরে এক অপার্থিব চিৎকার জুড়ে দিল। আর সেই সঙ্গেই শুরু হলো ভূমিকম্প। মন্দিরের গা থেকে ইট ভেঙে পড়তে শুরু করল। পুরো মন্দিরটা ধূলিস্যাৎ হওয়ার আগে কোনমতে প্রাণ বাঁচিয়ে ওরা ছয়জন বেরিয়ে এলো। বেশ কিছুটা নিরাপদ দুরত্বে সরে গিয়ে দেখতে পেল মন্দিরটা একটা বিশাল গহ্বরের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। পাতাল-নিবাসী পিশাচিনি আবার নিজ স্থানে ফিরে যাচ্ছে। অনিক হঠাৎ বলে ওঠে, “ক্ষমতার লোভে ভৃত্রাক্ষিকেও কম জ্বালাতন করেনি ওই বুড়ো। বেচারি তাই এই ভাবেই প্রতিশোধ নিল”। ওরা ফিরে দেখল, মন্দিরের জায়গাটা এখন কেবলই একটা ফাটল ধরা চাতাল। বিকেলের পড়ন্ত বেলায় লাল আভাটা যেন শেষ পর্যন্ত একটু স্বাভাবিকত্ত ফিরে পেয়েছে।
তন্ত্র সাধনার যজ্ঞ সত্যিই বড়ো কঠিন। যজ্ঞের সংকল্প যার নামে তার বলিই তো শুধু নেবে দানবী। যজ্ঞ সম্পূর্ণ না করেই রিশাকে আগুনে ঠেলে দেওয়াটাই সব থেকে বড় ভুল হয়ে দাঁড়ালো লোকটার। তবে এটা বোধহয় হওয়ারই ছিল। এতো নিরপরাধ মানুষকে বলি দেওয়ার শাস্তি স্বরূপ ঠাকুরই হয়তো এটা ঘটালেন। যতই হোক শয়তানের উপাসক হয়ে বেশিদিন বাঁচে না কেউ। এও ছাড় পায়নি তাই।
গ্রামে ফিরে ওরা কাউকেই সত্যিটা জানাল না কারণ ওনাকে গ্রামে সবাই খুব শ্রদ্ধা-ভক্তি করত। ভৃত্রাক্ষির কবল থেকে ওদের বাঁচাতে গিয়েই উনি নিজেকে বলি দিয়েছেন, এমনটাই জানানো হলো সকলকে। এতে গ্রামবাসীরা কষ্ট পেলেও তাদের সরল বিশ্বাসকে না ভাঙাই সঠিক মনে করল ওরা। বৃদ্ধার জন্য বেশ কিছু টাকাও দিয়ে গেল। তার আশীর্বাদেই কিনা জানা নেই, তবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে সেবারের সেমেস্টারে ওরাই সর্বোচ্চ নম্বর নিয়ে পাস করল।
By Sanchita Kar

Comments