top of page

স্বপ্নপূরণ

By Ayan Guin


কাল এনার জীবনের সবথেকে বড় দিন হতে চলেছে। কিশোরী বয়স থেকে একজন বিখ্যাত সঞ্চালক হবার যে স্বপ্নটা প্রতিটা দিন দেখে এসেছে কাল তা জীবনের মধ্যাহ্নে বাস্তবায়িত হতে চলেছে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে এনা পৌঁছে গেল ফেলে আসা ছোটবেলা থেকে বড়বেলায় পৌঁছে একজনের ঘরণী হওয়া থেকে শুরু করে আজকের এক কন্যা সন্তানের মা হওয়ার উত্তরণের স্মৃতিতে। ছোটবেলা থেকেই ভালো আবৃতি নাটক করতে পারতো। কিন্তু একটু বড় হয়ে যখন কিশোরী বয়সে পা দিলো, তখন থেকেই আস্তে আস্তে বাড়ির থেকে সব বন্ধ করে দেওয়া হতে থাকলো। মফস্বলের এক মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে হওয়াই এর কারণ ছিল কিনা এনা আজও জানেনা। শুধু এটুকু মনে আছে, একদিন মার বারণ সত্ত্বেও নাটকের রিহার্সালে যাবার জন্য, বাবা রাত্রে অফিস থেকে বাড়ি ফিরে ভীষণ বকাবকি করেন। আর তারপর থেকেই নাটক, আবৃত্তি সব বন্ধ করে দেওয়া হয়। সাথে বলা হয় এসব ভদ্র বাড়ির মেয়েরা করেনা। হয়তো সময়টা নব্বই দশকের ছিল বলেই এরকমটা বেশি হয়েছিল। কারণ আজকের যুগের বাবা-মারা অনেক আধুনিক হয়ে গেছেন। সবকিছু বন্ধ হয়ে গেলেও F.M রেডিও শোনাটা বন্ধ হয়নি। এটাই ছিল তার মরুভূমির মতো জীবনে একমাত্র মরুদ্যান। বাড়িতে কেউ না থাকলেই F.M রেডিওর সঞ্চালকের মতো করে কথা বলা, আবৃত্তি করার চেষ্টা করতো। এনার সব থেকে বড় অনুপ্রেরণা ছিল মীর। যদিও মীরের ও তখন শুরুর দিন। কিন্তু তার কথার বলার ধরণ ভীষণভাবে এনাকে ছুঁয়ে যেতো। এভাবেই জীবন চলতে থাকে। দেখতে দেখতে কলেজের গন্ডিও শেষ হয়, আর তারপরেই বাড়ি থেকে সম্বন্ধ দেখে বিয়ে। অনেক আশা নিয়ে এনা নিজের বাড়ি ছেড়ে একজন অচেনা মানুষের হাত ধরে শশুরবাড়িতে আসে। ভেবেছিলো বাবা মা না বুঝলেও, বর হয়তো বুঝবে তার ভালোলাগা খারাপ লাগাগুলো। তাই বিয়ের কিছুমাস পরে একদিন তার বর আদিত্যকে বলেই বসে, তার ভালোলাগার কথা, ভালোবাসার কথা আবৃত্তি, নাটক নিয়ে। বলে যে সে বিয়ের আগে যা পারেনি করতে নতুন করে আবার সেগুলো শুরু করতে চায়। খাঁচায় বন্দী তার স্বপ্নগুলোকে সে মুক্ত বিহঙ্গের মতো আকাশে উড়তে দিতে চায়। আদিত্য সবশুনে সরাসরি না বললেও বলেছিলো, তোমার তো কিছু অভাব নেই এনা। শাড়ি, গয়না, বছরে দু তিনবার বাইরে ঘুরতে যাওয়া কিছুর অভাব তো রাখিনি। তাই এসবের কি দরকার , বেকার সব জিনিস করে কি লাভ। সবশুনে সেদিন চিৎকার করে কাঁদার ইচ্ছে হলেও, নিজের আবেগের গলা টিপে ধরে, হাসিমুখে বলেছিলো ঠিকই তো, একটা মেয়ের বেঁচে থাকার জন্য শাড়ি, গয়না, বিদেশ ভ্রমণ এর বেশি আর কি চাই। ওইসব বেকার আবৃত্তি, নাটকের শখ কি কাজে লাগবে।




এরপর সময়ের সাথে জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এক মেয়ে হয়েছে। সংসারের কাজ আর মেয়েকে বড় করার দায়িত্ব পালন করতে করতেই বছরগুলো কিভাবে পেরিয়ে গেলো এনা নিজেও জানেনা। আর সময়ের সঙ্গে তার স্বপ্নগুলোকে সে একপ্রকার বাধ্য হয়েই ভুলে গেছে। তার মেয়ে তৃনার বয়স এখন পনেরো। একদিন তৃনা হটাৎ আলমারি ঘাঁটতে গিয়ে দু-বছর আগে তার পুরোনো ডাইরি খুঁজে পায়। আর জানতে পারে তার মনের ভেতর জমা থাকা কষ্টগুলো। বুঝতে পারে যে এনা কিভাবে প্রথমে একজন মেয়ে, তারপর স্ত্রী আর শেষে মা হয়ে শুধু বছরের পর বছর নিজের দায়িত্ব কর্তব্যগুলো পালন করে গেছে, নিজের আবেগ, ভালোবাসা, স্বপ্নগুলোকে মেরে ফেলে। তৃনা তখনই ঠিক করে ফেলে এনার স্বপ্ন বাস্তবায়িত সে করেই ছাড়বে। আর এর কিছুদিন পর সোশ্যাল মিডিয়াতে তার হটাৎ চোখে পড়ে রেডিও মির্চির RJ নেবার বিজ্ঞপ্তিটা। এনাকে না জানিয়েই সে মায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতার সমস্ত কাগজ সে পাঠিয়ে দেয় রেডিও মির্চির ঠিকানায়। এরপর সে এনাকে সব জানায়। তৃনার চাপে পড়েই এনা আবার নতুন করে আবৃত্তি, নাটকের সংলাপ পাঠের অনুশীলন প্রতিদিন করতে থাকে মেয়ের সামনে। আর অপেক্ষায় থাকে যদি ইন্টারভিউ এর ডাক আসে। আর একদিন হঠাৎই ডাক চলে আসে। তৃনার সাথে গিয়ে ইন্টারভিউ দেয় এনা। আর অদ্ভূত ভাবে পাসও করে যায়। তারপর থেকেই শুরু হয় এনার নতুন জীবন, নতুন নাম RJ এনা। প্রথম প্রথম অসুবিধা হলেও নিজের ভালোবাসার জোরে গত দেড় বছরে সব বাধা পেরিয়ে সাফল্যের শিখরে আজ এনা। সবথেকে বড় সম্যসা ছিল আদিত্যকে লুকিয়ে সবকিছু করা। কিন্তু মেয়ে তৃনাই সব সামলেছে। আর বছরের বেশীরভাগ সময় ব্যবসার কাজে শহরের বাইরে থাকায় আদিত্য কিছু বোঝার মতো সময়ও পায়নি। আজ শহরের সবথেকে জনপ্রিয় RJ আর কেউ না, এনা। এবছরের সেরা RJ-র পুরস্কার নেবার জন্য আগামীকাল এনাকে শহরের সব থেকে বড় অডিটোরিয়ামের মঞ্চে উঠতে হবে। সেই স্বপ্নপূরণ যা বহু বছর আগে কিশোরী এনা দেখেছিল, আর যা সত্যি হতে চলেছে নিজের মেয়ের হাত ধরে। চিন্তা একটাই আদিত্য জেনে এবার যাবেই তখন কি হবে। তৃনার মা ডাকে বাস্তবের জগতে ফিরে এলো এনা চিন্তার জগৎ থেকে। তৃনার মুখ থেকে "মা তুমি চিন্তা করোনা বাবার ব্যাপারটা আমি সামলে নেবো" শুনে একটু হলেও আশস্ত হলো।

পরের দিন তৃনার পরিকল্পনা মতো, আদিত্য আর তৃনা আগে বেরিয়ে যায়। তৃনার আবদার আদিত্য ফেলতে না পেরে অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠান দেখতে যায় তৃনার সাথে। আর এনা আলাদা একা ওই অনুষ্ঠানেই পুরস্কার নিতে যায়। মঞ্চে পুরস্কার নেবার জন্য এনার নাম ঘোষণা করতেই এনা যখন মঞ্চে এসে দাঁড়ালো, তখন আদিত্য সব বুঝতে পারলেও কিছু বলতে পারলো না। একটা অপরাধবোধ আদিত্যকে ঘিরে ধরলো। শুধু তৃনার চোখ থেকে তার বাবার চোখের কোনায় থাকা জলটা এড়ালো না। পুরস্কার নেবার পর যখন এনাকে কিছু বলতে অনুরোধ করা হলো, এনা প্রথমেই বললো এই পুরস্কার আসলে পাওয়ার যোগ্য আমি না আমার মেয়ে তৃনা। কারণ তৃনা না থাকলে আমি আমার জীবনটা নতুন করে শুরু করতে পারতাম না। আসলে সন্তান বলেই হয়তো আমার কষ্টের জায়গাটা বুঝতে পেরেছিলো। তাই আমার রেডিও সঞ্চালক হবার মৃত স্বপ্নটা আবার তৃনার হাত ধরেই নতুন করে আবার প্রাণ ফিরে পেলো। আর আজ এই পুরস্কার আমি পেলাম। পুরস্কার নিয়ে মঞ্চ থেকে নিচে নামার সময় আদিত্য কিছু একটাবলতেচাইলোএনাকেধরাগলায়।তাকেথামিয়েএনাবললোতোমারওপরকোনোরাগআজআরআমারনেই।কারণতোমারথেকেপাওয়াসন্তানইআজআমাকেআবারনতুনকরেবাঁচতেশিখিয়েছে।শুধুএকটাইঅনুরোধমেয়েটাকেঅন্ততঃনিজেরখুশিমতোজীবনটাকেগড়েনিতেদাও।যাতেআরেকটাএনাতৈরিনাহয়।আরআশাকরবএটাহয়তোএবারবুঝেছোযে, একটামেয়েরবেঁচেথাকারজন্যশাড়ি, গয়না, বিদেশভ্রমণএগুলোইআসলনয়।তারনিজস্বস্বপ্নওথাকতেপারে, যেটাকেবন্দীনাকরে, ডানামেলেউড়তেসাহায্যকরে, পাশেথেকেমনোবলবাড়ানোটাইপ্রকৃতভাবেবাঁচতেসাহায্যকরা।কথাশেষকরেপুরস্কারটাতৃনারহাতেতুলেদিয়েতৃনাকেবুকেজড়িয়েধরে, এনাকাঁদতেথাকলো।আরতৃনাবললোআজমনখুলেশেষবারেরমতোকেঁদেনাওমা।কারণএবারশুধুইসত্যিকারেরভালোথাকারআরভালোবেসেবাঁচারদিনযেশুরুকরতেহবেতোমাকেআরবাবাকে।আশাকরিসেইএকটাসুযোগবাবাকেতুমিদেবে।এইবলেবাবারহাতটামায়েরহাতেতুলেদিলোতৃনা........



By Ayan Guin




Comments

Rated 0 out of 5 stars.
No ratings yet

Add a rating
SIGN UP AND STAY UPDATED!

Thanks for submitting!

  • Grey Twitter Icon
  • Grey LinkedIn Icon
  • Grey Facebook Icon

© 2024 by Hashtag Kalakar

bottom of page